হোমিও চিকিৎসার অপরিহার্য বিষয় যা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-ACID FLORIC
ACID FLORIC - এসিড ফ্লোরিক
রাসায়নিক চিহ্ন:- HF ।
প্রতিশব্দ: –
এসিডাম ফ্লোরিকাম , হাইড্রোজেন, ফ্লোরাইড , ফ্লোর হাইডিকাম ।
উৎস:-
সালফিউরিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড।
প্রস্তুত প্রণালী:-
মূল পদার্থ পরিশ্রুত জলে দ্রব করিয়া মূল অরিষ্ট প্রস্তুত করা হয় । পরে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়ম অনুসারে সুরাসার সহযোগে উচ্চশক্তি প্রস্তুত করা হয় ।
আবিষ্কারক:-
ডাঃ হেরিং সতের জন সহযোগী নিয়া ইহা আবিস্কার করেন ।
ধাতুপ্রকৃতি:-
ইহা অত্যন্ত গভীর এন্টিসোরিক , এন্টি সিফিলিটিক ও এন্টিসাইকোটিক ঔষধ ।
ক্রিয়াস্থান:-
ইহার
ক্রিয়া অজ্ঞাতসারে প্রকাশ পায় , লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে উপস্থিত হয় , ইহা অতিশয় গভীরক্রিয় ঔষধ । অস্থি , শ্লৈষ্মিকঝিল্পী , রক্ত , গ্ল্যাণ্ড প্রভৃতির উপর ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে ।
বিশেষ
লক্ষণ:-
১. খুব মিতব্যয়ী বা কৃপণ (লাইকো)।
২. কথা বলিলে দাঁতের ব্যথা বাড়ে।
মানসিক লক্ষণ:-
১. যাহাদেরকে এক সময় রোগী সবচেয়ে বেশী ভালবাসিত এখন তাহাদের প্রতি উদাসীনভাব । স্ত্রী , পুত্র ও কন্যার প্রতি প্রীতির অভাব ।
২. রোগীর দায়িত্ব জ্ঞান বলিতে কিছুই নাই ।
৩. নীজেই আমাদ প্রমোদে রোগী মাতিয়া থাকে । কিন্তু নীতির প্রতি উদাসীন ।
৪. বিভ্রান্তিকর সংগম প্রবৃত্তি । সঙ্গমেচ্ছা প্রবল । লিঙ্গোদ্রেক হেতু রোগী । রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া থাকে ।
৫. মানসিক অস্থিরতা , স্থিরভাবে কোথাও বসিতে পারে না ।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১. রোগীর নখ , চুল ও গাত্র চর্মে অদ্ভুত লক্ষণ দৃষ্ট হয় । প্রত্যেকটিই
বাড়িতে থাকে । চর্মের যেখানে সেখানে মামড়ির ন্যায় উদ্ভেদ সৃষ্টি হয় । কিন্তু তলদেশটি আরোগ্য হয় না । চুল উঠিয়া যাইতে থাকে ও ঔজ্জল্য হারায় , নখসমূহ বিকৃতভাবে বাড়ে । নখগুলি টুকরা টুকরা হইয়া ভাঙ্গিয়া যায় ।
২.
মস্তক কেশশূন্য বা টাক , চর্মের ক্ষয় প্রাপ্তি । ভিতর দিক হইতে বহির্দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত মস্তকের দুই পার্শ্বে চাপবোধ । মুদ্রাস্থিসমূহের এবং রগের প্রবর্ধিত অস্থির ক্ষয় প্রাপ্তি বা গলিত অবস্থা , তৎসহ প্রচুর পরিমাণে স্রাব । নিঃসরণ ।
৩. হাড় , বিশেষ করিয়া লম্বা হাঁড়ের ঘা ও পচন , ক্ষতস্থান চুলকায় , পুনরায় পাকে ও ক্ষতের সৃষ্টি হয় ।
৪. চক্ষর উপর দিয়া বায়ু প্রবাহ সঞ্চালিত হইতেছে এইরূপ অনুভূতি ।
৫. পুরাতন সর্দি , তৎসহ নাসারন্ধ্রের ভেদকের উপর ক্ষত । নাসিকা
অবরুদ্ধ এবং ঈষৎ ভারী বোধ হয় , কপালে বেদনা ।
৬. দাঁতের গোড়ায় ঘা , দন্তনালী , তৎসহ অবিরত রক্তময় ও লবণাক্ত স্রাব বাহির হওয়া ।
৭. উত্তাপ অসহ্য , উত্তাপে বৃদ্ধি , ঠাণ্ডা জলে ধুইলে রোগ লক্ষণ কমে ।
৮. পিত্তাধিক্য জনিত উদরাময় , তৎসহ কফি পানে বিরক্তি ।
৯. হাতের তালু ও পায়ের তালু ঘামে - ক্ষতিকর ঘর্ম , দুর্গন্ধযুক্ত, জ্বালা , অসাধারণ উত্তাপ ও ক্ষতস্থান
ইহার বিশেষ লক্ষণ ।
১০. পুরাতন জ্বর , কেবলমাত্র রাত্রে আসে - অন্য সময় হয় না ।
১১. সকাল বেলায় মূত্রনালীর মুখে হলুদ পদার্থ দেখা দেয় ।
১২. হস্তপদের স্ফীতি , বিশেষতঃ পায়ের, লিঙ্গাগ্র ত্বকের স্ফীতি ।
১৩. অল্প বয়সে বৃদ্ধের ন্যায় দেখায় ।
প্রয়োগ ক্ষেত্র:-
পারদ ও সিফিলিস মিশ্রিত দোষ , উপদংশ ক্ষত , অস্থির পীড়া ও ক্ষত , দন্তপীড়া , আঙ্গুলফাটা , শিরাস্ফীতি , প্রস্রাবের জ্বালা , চর্মপীড়া , অজীর্ণ ও পেট ফোলা , দুর্বলতা , বিভ্রান্তিকর সঙ্গম প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয় ।
অস্থিক্ষতে ব্যবহার:-
বিশেষতঃ যদি লম্বা অস্থিসমূহে ক্ষত হয় , ঐ ক্ষত হইতে
নিগত রস পাতলা হয় এবং উহা চারিপাশে লাগিলে হাজিয়া যায় । যদি কর্ণমূলের নিচে উপদংশ বা অনেক দিন কান পাকার জন্য অস্থিতে ক্ষত হয়
তাহা হইলে ইহা উপকারী । দাঁতের মাড়ীতে ও চক্ষুতে শোথ
ক্ষত নিগত রস রক্ত মিশ্রিত এবং উহার স্বাদ নোনতা , কখন কখন নিতান্ত মন্দ , ক্রমশঃ মুখে অধিক গন্ধ হইতে থাকে , শরীর নিতান্ত কৃশ ও শীর্ণ হইতে আরম্ভ হয়।
অস্থি পচনে ফ্লোরিক এসিড ও অরাম মেটের তুলনা:-
অস্থি পচনে ফ্লোরিক এসিড:-
লম্বা হাড়ের বিশেষ করিয়া ফিমার , হিউমেরাস , রেডিয়াস , আলনা প্রভৃতি হাড়ের ক্ষত ও ঐ ক্ষত হইতে পাতলা রস বাহির হইলে , উহার চারিপাশে হাজিয়া গেলে ইহা উপযোগী । কর্ণমূলের নিচে উপদংশে বা অনেকদিন কান পাকার জন্য অস্থিতে ক্ষত হইলেও ইহা উপযোগী ।
অস্থি পচনে অরাম মেট:-
অরাম মেট ও অস্থিরোগে অর্থাৎ করোটির অস্থি এবং নাসিকার ও তালুকার অস্থির ক্ষতে ও পচনে অরাম ব্যবহৃত হয় ।
পুরাতন উদরাময়ে:-
উপদংশ রোগে ভুগিয়া বা পারদ অপব্যবহারে যাহাদের স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া গিয়াছে তাহাদের পুরাতন উদরাময় , প্রাতঃকালীন উদরাময় । মলদ্বার অত্যন্ত চুলকায় , মলত্যাগের পর মলদ্বার বাহির হইয়া । পড়ে , প্রচুর রক্তস্রাব হয় । গরম পানীয় পানে বৃদ্ধি ।
অর্শ রোগে:-
অর্শের সহিত কোষ্ঠবদ্ধতা এবং মলদার চারিপাশ্বে ও ভিতরে অত্যন্ত চুলকানি , পেরিনিয়াম , মলদ্বার ও জননেন্দ্রিয়ের মধ্যবর্তী স্থানেও চুলকানি ।
আঙ্গুল হাড়ার:-
আল হাড়া অস্ত্রোপচার করার পর বা আপনি পাকিয়া ফাটিবার পর হাত পর্যন্ত আক্রান্ত হইলে এবং ক্ষত । হইতে নিঃসৃত রস দুর্গন্ধময় হইলে ও সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা জল লাগাইলে যদি অরাম । বোধ হয় তাহা হইলে ইহা উপকারী
শীরাস্ফীতি:-
হ্যামামেলিসের ন্যায় ইহাতেও শীরাস্ফীতি আরোগ্য হয় । হ্যামামেলিস বাহ্য ও আভ্যন্তরীণ উভয় প্রকারেই প্রয়োগ বিধেয় । শিরাস্ফীতি নৃতন হইলে হ্যামামেলিস এবং পুরাতন হইলে ফ্লোরিক এসিড উপকারী ।
প্রদাহ ও বেদনা:-
প্রদাহ ও বেদনা - ডান কাঁধের সন্ধির বেদনা । উপর হইতে আঙ্গুল পর্যন্ত পরিচালিত হয় । বাম তর্জনী কিংবা সমস্ত আঙ্গুলের বেদনা ও প্রদাহে এসিড ফ্লোর উপকারী । সমস্ত হাত ফুলিয়া যায় , ফোলা স্থান প্রথমে একটু গরম হয় ও তাহাতে যন্ত্রণা থাকে , পরে পাকিয়া যায় ।
দত্ত পীড়ার লক্ষণ: -
দন্তের মাড়ীতে প্রথমে স্ফোটক হইয়া ক্রমশঃ শোথ ঘায়ে পরিণত হয় এবং আরোগ্য না হইলে ক্রমশঃ দন্তের গোড়ায় অস্থি আক্রান্ত হয়। পূজ অত্যন্ত দুর্গন্ধ এবং মুখ দিয়া পচা গন্ধ বাহির হয় ।
চর্মপীড়ার:-
চর্মপীড়ায় অসহ্য চুলকানি থাকে । চর্ম অত্যন্ত শুষ্ক ও খসখসে হয় এবং ক্রমশঃ শরীরের স্থানে স্থানে নানারূপ । চর্মরোগ উৎপন্ন হয় এবং আক্রান্ত স্থানসমূহ অসম্ভব চুলকায় । এই চুলকানি শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশের অল্প স্থানে হইয়া থাকে । চুলকানি ঠাণ্ডায় ভাল থাকে কিন্তু গরমে বাড়ে ।
দুর্বলতার
লক্ষণ:-
ও
এলাপ্যোথিক চিকিৎসায় রোগ আরোগ্যের পর শরীরের পুষ্টির জন্য যেরূপ টনিক ঔষধ প্রয়োগের প্রচলন আছে , হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সেরূপ নাই । কিন্তু এই এসিড সেবন করিলে প্ররিশ্রম করার শক্তি বাড়ে । এই ঔষধে বল বৃদ্ধি করার ক্ষমতা আছে ।
অজীর্ণ লক্ষণ:-
অজীর্ণ লক্ষণ ও অজীর্ণ রোগে পেট ফোলা , পেট বেদনা ও পেটে যন্ত্রণা ,রোগীর অত্যন্ত পিপাসা হয় । শুধুমাত্র ঠাণ্ডা পানীয় পান করিতে ইচ্ছা করে । সামান্য আহারের ব্যতিক্রম হইলে অসুখ করে , পিত্তবমি হয় , সর্বদাই হেউ হেউ করিয়া ঢেকুর উঠে ও বায়ু নিঃসরণ হয় , তাহাতে রোগী উপশম বোধ করে ।
উপদংশ ও উপদংশজনিত পীড়া:-
অস্থিবৃদ্ধি , অস্থিপচন , অক্ষিক্ষয় যুক্ত পুরাতন রোগীদের মধ্যে যাহাদিগকে ক্ষত দেখা না দেওয়া পর্যন্ত পারদ ও অন্যান্য ঔষধ সেবন করানো হইয়াছে অথবা উপদংশজাত রোগীর সচরাচর যেরূপ নাকের রোগ দেখা যায় , তাহাতে ইহা উপযোগী । ইহাতে নাক বাড়িলে নাক হইতে ছোট ছোট অস্থিখণ্ড নির্গত হয় । নাকে অত্যন্ত যাতনা , নাকের হাড়গুলি সব নষ্ট হইয়া যায় এবং নাক যেন একটি ছিদ্র বিশিষ্ট নরম । মাংস খণ্ডের ন্যায় চাপ্টা হইয়া পড়ে । উপদংশের ক্ষতে আলজিব ক্ষয়িয়া যায় এবং টনসিল গ্রন্থি দুইটি মৌচাকের ন্যায় হইয়া পড়ে । দীর্ঘকাল স্থায়ী দুষ্ট প্রকৃতির ক্ষত ও উদ্ভেদ । দাঁত ক্ষয়িয়া যায় বা ভাঙ্গিয়া পড়ে । এই ঔষধ বহুক্ষেত্রে দাঁতের গোড়ার ঐ ক্ষত আুরোগ্য করিয়া দাঁতগুলিকে রক্ষা করিয়াছে । গলার পুরাতন ক্ষত , উপদংশজাত পুরাতন ক্ষত ।
যৌন প্রবৃত্তি বা জননেন্দ্রিয় লক্ষণ:-
যাহাদিগকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসিত , তাহাদের প্রতি ঔদাসীন্য এই ঔষুধের প্রদান লক্ষণ। অবশ্য সিপিয়াতেও এই লক্ষণ আছে, সিপিয়া স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রেই বেশী প্রযোজ্য আর পুরুষদিগের ক্ষেত্রে ফ্লোরিক এসিড । যে সকল যুবক পাপকার্যে ও হস্তমৈথুনে স্নায়বল নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছে , তাহাদের বিষন্নতার সহিত মানসিব অবসন্নতা । এসিড ফ্লোরের রোগী তাহার সন্তান , স্ত্রী , বন্ধু সবাইর প্রতি বিতৃষ্ণা হইয়া পড়ে । বিভ্রান্তিকর সংগম প্রবৃত্তি আছে, লিঙ্গোউত্তেজনা হেতু রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া থাকে ।
পুরাতন পীড়ায়:-
কোন পীড়া প্রথমাবস্থায় আরোগ্য না হইয়া পীড়া পুরাতন আকার ধারণ করিলে ইহা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় । যেমন পুরাতন চর্মপীড়া , দন্তমাড়ীর ঘা , পুরাতন ক্ষত , পরাতন উপদংশ , পুরাতন শিরাস্ফীতি , আঙ্গুল হাড়া , স্ত্রীপীড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা উপযোগী । পুরাতন জ্বর পীড়ায় রোগী অনেকদিন যাবত ভোগে , প্রতি সন্ধ্যায় বা বাতির প্রথম ভাগে সামান্য জ্বর হইতে থাকে কিন্তু থার্মোমিটারে তাপ উঠে না , এইরূপ পুরাতন জ্বরে এসিড ফ্লোর উপকারী । গলার পুরাতন ক্ষত , বিশেষ করিয়া উপদংশজাত পুরাতন ক্ষতেই ইহা ভাল উপযোগী । দুষ্ট জাতীয় অস্থি ক্ষতে , অস্থি পচনে , ভগন্দরের ক্ষতে , দন্ত নালীতে , অশ্রুস্রাবী কোষের নালীক্ষতে , গুহ্যদ্বারের নালীক্ষতে , উরুর হাড় ও পায়ের হাড়ের রোগে পুরাতন নালীক্ষত জন্মিয়া ক্ষতকর স্রাব দ্বারা আশপাশ হাজিয়া যাইতে থাকিলে ।
শ্বেতপ্রদর:-
প্রচুর স্রাবের সহিত যদি মাথা ধরা থাকে এবং প্রস্রাব করিবার পর সেই মাথা ব্যথা কমিয়া যায় অথবা মূত্রের বেগ হওয়া মাত্র প্রস্রাব না করিলে যদি মাথাটি ধরে তবে ফ্লোরিক এসিড উপকারী । জননেন্দ্রিয় স্থান হাজিয়া যায় বলিয়া হাঁটিতে কষ্ট হয় ।
প্রান্তদেশে:-
হাতের আঙ্গুলের সন্ধিগুলি স্ফীত । মনে হয় যেন নখের নিচে গৌজ রহিয়াছে । নখগুলি ভাঙ্গিয়া পড়ে । হাড়ে বিশেষত দীর্ঘাস্থিতে নালীক্ষত এবং অস্থি ক্ষয় । মেরুদণ্ডের শেষ অস্থিতে
বেদনা, টিবিয়া অস্থিতে ক্ষত ।
বৃদ্ধি:-
প্রাতকালে , গরমে , মদ্যপানে ।
উপশম:-
ঠাণ্ডাজল লাগাইলে , ঘুরিয়া বেড়াইলে , ঠাণ্ডা বাতাসে , কাপড় আঁটিয়া পরিলে ।
কোন মন্তব্য নেই